১। গুছিয়ে কাজ করুন

আপনার কাজ আর আশেপাশের পরিবেশ যতো অগোছালো থাকবে, খুঁটিনাটি বিষয়গুলো থেকে মনোযোগ সরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে ততো বেশি। তাই মনোযোগ বাড়ানোর অন্যতম একটা উপায় হচ্ছে সবকিছু যতোটা সম্ভব গুছিয়ে রাখা।

গুছিয়ে কাজ করার মানে এটা না যে আপনার ডেস্ক সবসময় সুন্দরভাবে সাজানো থাকতে হবে বা কোনো অপ্রয়োজনীয় জিনিস থাকা যাবে না। এর মানে হচ্ছে আপনার কখন কী করতে হবে তার পরিকল্পনা গোছানো।

ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে সব অ্যাপয়েন্টমেন্ট ও মিটিং শিডিউল করুন যাতে কোনোটার কথা সহজে ভুলে না যান এবং প্রতিটি মিটিং-এর জন্য তথ্য ও আইডিয়া নোট করে রাখুন। এরপর ডেডলাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তারিখের ওপর ভিত্তি করে প্রতিদিন কী কী করতে চান তার পরিকল্পনা করুন।

রাইডার ক্যারলের বুলেট জার্নাল ও ডেভিড অ্যালেনের Getting Things Done (GTD)-এর মতো পদ্ধতিগুলো মনোযোগ ধরে রাখা ও কাজের পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আপনিও এ ধরনের কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখতে পারেন।



২। তালিকা তৈরি করুন

অনেকের মধ্যেই একটা ধারণা দেখা যায় যে লিস্ট তৈরি করা এবং পরিকল্পিতভাবে কাজ করা সৃজনশীলতা নষ্ট করে দেয়। এটা খুবই ভুল একটা ধারণা। কাজের তালিকা বানানো বরং সৃজনশীলতাকে বিকশিত করে। কারণ এতে করে প্রতিটি কাজকে প্রয়োজনীয় সময় দেওয়া যায়, যাতে করে কাজ থেকে তৈরি হওয়া মানসিক চাপ অনেকটা কমে আসে। এবং বর্তমানে যে কাজটা করছেন তার দিকে সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয়।

কাজের তালিকা বানানো আর পরিকল্পনা করা বেশ মজার একটা কাজ। তবে পরিকল্পনার দিকে অনেক বেশি মনোযোগ দেওয়া আবার সময় অপচয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। লিস্ট তৈরির জন্য আপনি কাগজ কলম নিঃসন্দেহে ব্যবহার করতে পারেন। তবে এই ডিজিটাল যুগে ব্যবহার্য অনেক অ্যাপ আছে যা আপনার পরিকল্পনা করার পদ্ধতিকে সহজ করে তুলবে এবং সময়মতো কাজের কথা মনেও করিয়ে দেবে।

কাজের লিস্ট ও তার সাথে সম্পর্কিত নোট রাখার জন্য আমার ব্যক্তিগত পছন্দের অ্যাপ হচ্ছে Google Task এবং Google Keep. দুটো অ্যাপেই অভ্যস্ত হওয়া যেমন সহজ, ব্যবহারের দিক দিয়ে তেমন কার্যকরী। এছাড়াও চাইলে আপনি Todoist বা Any.do এর মতো অন্য কোনো অ্যাপও ব্যবহার করে দেখতে পারেন।



৩। ডিস্ট্র্যাকশন থেকে দূরে থাকুন

মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে পাশের ডেস্কে বসা কলিগ পর্যন্ত কাজের সময় আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করার জিনিসের অভাব হয় না। প্রশ্ন হচ্ছে, এইসব ডিস্ট্র্যাকশন থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন কীভাবে?

আমরা অনেকেই অফিসে খোলামেলা পরিবেশে অনেক মানুষের মধ্যে বসে কাজ করি। ফলে দেখা যায় সবসময়ই কেউ না কেউ কথা বলছে অথবা হাঁটাচলা করছে। আপনার নিজেকে এই সব কিছু থেকে মানসিকভাবে আলাদা করতে শিখতে হবে, যাতে আপনি কাজের দিকে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন।

এর জন্য অনেকেই নয়েজ ক্যান্সেলেশন হেডফোন ব্যবহার করেন। রিসার্চে পাওয়া গেছে, যারা কাজ করার সময় ক্লাসিক্যাল মিউজিক শোনেন তাঁদের কাজের প্রতি মনোযোগ বেশি হয়। ইউটিউবে অনেক ধরনে ‘ফোকাস মিউজিক’-এর প্লে লিস্ট পাওয়া যায়, যা থেকে আপনি পছন্দ মতো একটি প্লে লিস্ট খুঁজে নিতে পারেন। তবে মনোযোগে সাহায্য করার জন্য কোনো লিরিক্স যুক্ত মিউজিক না শোনাই আমার মতে ভালো, কারণ তাতে বরং ডিস্ট্র্যাকশনের পরিমাণ আরও বাড়ে।

এছাড়াও মোবাইলের নোটিফিকেশন বন্ধ রাখা অথবা মোবাইল দূরে রেখে কাজ করতে বসা, ডেস্কটপে ইমেইল ও মেসেজ নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখা – এইসবও কাজ থেকে হঠাৎ মনোযোগ সরে যাওয়ার সম্ভাবনা কমাবে।




৪। নিয়মিত বিরতি নিন

যতক্ষণ আমরা কাজ করি, আমাদের মস্তিষ্কের পেশীগুলোও ততক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পায় না। ফলস্বরূপ এই পেশীগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং যে কোনো কাজে সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। প্রতিদিন টানা আট ঘণ্টা করে কাজ করা কারও জন্যই বাস্তবসম্মত নয়, এতে বরং বার্ন আউট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। তাই মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং নিয়মিত বিরতি নেওয়া।

মাঝে মাঝে চেয়ার থেকে উঠে অফিসের ভেতর হাঁটাহাঁটি করা অথবা মানসিক বিরতি নিতে কাজের সাথে সম্পর্কিত নয় এমন একটি ব্লগ পোস্ট পড়া পরবর্তীতে কাজের প্রতি আপনাকে আরও মনোযোগী করে তুলতে পারে।